Thursday, January 26, 2017

শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য

১) শ্রীল সনাতন গোস্বামী বিরচিত শ্রীকৃষ্ণলীলা স্তব থেকে -

সর্ব-শাস্ত্রাব্দী-পীযুষ / সর্ব-বেদৈক-সৎ-ফল
সর্ব-সিদ্ধান্ত-রত্নাঢ্য / সর্ব লোকৈক-দৃক-পদ
সর্ব-ভাগবত-প্রান / শ্রীমদ্ভাগবত-প্রভু
কলি-ধান্তোদিত-আদিত্য / শ্রীকৃষ্ণ-পরিবর্তিত ।। ১।।

অনুবাদঃ সর্ব-শাস্ত্রাব্দী-পীযুষ = সমস্ত শাস্ত্রের রস (অমৃত) হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত (সমুদ্রকে মন্থন করে যা পাওয়া যায় অর্থাৎ অমৃত) তেমনি সমস্ত শাস্ত্রকে মন্থন করে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত ।)
সর্ব-বেদৈক-সৎ-ফল = সমস্ত শাস্ত্রের ফল (নিগম গলিত ফল)
সর্ব-সিদ্ধান্ত-রত্নাঢ্য = সমস্ত সিদ্ধান্তের ভান্ডার । যে কোন সিদ্ধান্ত (রাজনীতি, সমাজনীতি, রসায়ন, জ্যোতিষ ইত্যাদি)
সর্ব লোকৈক-দৃক-পদ = সমস্ত লোকের দিশা প্রদানকারী ।
সর্ব-ভাগবত-প্রান = সমস্ত মহানভক্তের প্রান হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত ।
শ্রীমদ্ভাগবত-প্রভু  =  হে প্রভু শ্রীমদ্ভাগবত ।
কলি-ধান্তোদিত-আদিত্য = কলিযুগের অন্ধকারকে দুর করার জন্য এই ভাগবত উদিত হয়েছে ।
শ্রীকৃষ্ণ-পরিবর্তিত = শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন ভগবান স্বয়ং যিনি যিনি আমাদের কাছে শ্রীমদ্ভাগবত রূপে আবির্ভুত

২) শ্রীমদ্ভাগবত সর্ব শাস্ত্রের শিরোমণি

                   ধর্মঃ প্রোজ্ঝিত-কৈতবঃ অত্র পরমো নির্মৎসরাণাং সতাং
  বেদ্যং বাস্তবম্-অত্র বস্তু শিবদং তাপ-ত্রয়-উন্মূলনম্ ।
                     শ্রীমদ্ভাগবতে মহামুনিকৃতে কিং বা পরৈরীশ্বরঃ
                           সদ্যো হৃদি-অবরুধ্যতে-অত্র কৃতিভিঃ শুশ্রূষুভিঃ তৎ -ক্ষণাৎ ।।২।।            
                                                                               (ভাঃ ১/১/২)

অনুবাদঃ জড় বাসনাযুক্ত সব রকমের ধর্ম সম্পূর্ণভাবে বর্জন করে এই ভাগবত পুরাণ পরম সত্যকে প্রকাশ করেছে, যা কেবল সর্বতোভাবে নির্মৎসর ভক্তরাই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন । পরম সত্য হচ্ছেন পরম মঙ্গলময় বাস্তব বস্তু । সেই সত্যকে জানতে পারলে ত্রিতাপ দুঃখ সমূলে উৎপাটিত হয় । মহামুনি বেদব্যাস (উপলব্ধির পরিপক্ক অবস্থায়) এই শ্রীমদ্ভাগবত রচনা করেছেন এবং ভগবৎ-তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে এই গ্রন্থটিই যথেষ্ট । সুতরাং অন্য কোনও শাস্ত্রগ্রন্থের আর কি প্রয়োজন ? কেউ যখন শ্রদ্ধাবনত চিত্তে এবং একাগ্রতা সহকারে এই ভাগবতের বাণী শ্রবণ করেন, তখন তাঁর হৃদয়ে ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান প্রকাশিত হয়।

কৃষ্ণভক্তি-রস-স্বরূপ শ্রীভাগবত ।
তাতে বেদ-শাস্ত্র হৈতে পরম মহত্ত্ব ।।৩।।
                    (চৈঃচঃমধ্য ২৫/১৪৩)


৩) শ্রীমদ্ভাগবত - বেদরূপী বৃক্ষের সুপক্কফল ও মুক্তপুরুষদের একমাত্র উপাস্য

নিগম-কল্প-তরোঃ-গলিতং ফলং
শুক-মুখাৎ-অমৃত-দ্রব-সংযুতম্ ।
                               পিবত ভাগবতং রসমালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ ।।৪।।
                         (ভাঃ ১/১/৩)

অনুবাদঃ হে বিচক্ষণ এবং চিন্তাশীল মানুষ, কল্পবৃক্ষরূপী বৈদিক শাস্ত্রের অত্যন্ত সুপক্ক ফল শ্রীমদ্ভাগবত আস্বাদন করুন । তা শ্রীল শুকদেব গোস্বমীর শ্রীমুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল । তাই এই ফলটি আরও অধিক উপাদেয় হয়েছে, যদিও এই অমৃতময় রস মুক্ত পুরুষেরা পর্যন্ত আস্বাদন করে থাকেন ।

৪) শ্রীমদ্ভাগবত শ্রীকৃষ্ণের গ্রন্থরূপি শ্রীবিগ্রহ এবং দিব্যজ্ঞানালোক  প্রদানকারী পুরাণরূপ সূর্য

কৃষ্ণে স্ব-ধাম-উপগতে / ধর্ম-জ্ঞান-আদিভিঃ সহ
                        কলৌ নষ্ট-দৃশাম্-এষ / পুরাণ-অর্কঃ-অধুনা-উদিতঃ ।।৫।।
                                             (ভাঃ ১/৩/৪৩)

অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর লীলা সংবরণ করে ধর্ম ও তত্ত্বজ্ঞান সহ নিজ ধামে গমন করলেন, তখন সূর্যের মতো উজ্জ্জল এই পুরাণের উদয় হয়েছে । কলিযুগের অন্ধকারে আচ্ছন্ন ভগবৎ-দর্শনে অক্ষম মানুষেরা এই পুরাণ থেকে আলোক প্রাপ্ত হবে ।

পাদৌ যদীয়ৌ প্রথম-দ্বিতয়ৌ / তৃতীয়তুর্য্যো কথিতৌ যদুরূ
                    নাভিস্তথা পঞ্চম এব যষ্ঠো / ভূজান্তরং দোর্যুগলং তথান্যৌ
                    কন্ঠস্তু রাজন-নবমো যদীয়ো / মুখারবিন্দং দশমঃ প্রফুল্লম্
                   একদশো যস্য ললাটপট্টং / শিরোহপি তু দ্বাদশ এব ভাতি ।।
                   তমাদিদেবং করুণানিধানং / তমালবর্ণং সুহিতাবতারম্ ।
                   অপারসংসার-সমুদ্র-সেতুং / ভজামহে ভাগবত-স্বরূপম্ ।।৬।। ( পদ্মপুরাণ )

অনুবাদঃ আমি আদিদেব, করুণানিধান, তমালবর্ণ শ্রীকৃষ্ণের মঙ্গলময় শাব্দিক অবতার, অপার-সংসার-সাগর পার হইবার সেতু-স্বরূপ শ্রীমদ্ভাগবতকে ভজনা করি । এই গ্রন্থাবতারের দ্বাদশটি স্কন্ধ শ্রীভগবানের দ্বাদশটি অঙ্গ-স্বরূপ । প্রথম ও দ্বিতীয় স্কন্ধ ইহাঁর পদযুগল, তৃতীয় ও চতুর্থ স্কন্ধ ইহাঁর উরুদ্বয়, পঞ্চম ইহাঁর নাভিদেশ, ষষ্ঠ স্কন্ধ ইহাঁর ভুজান্তর অর্থাৎ বক্ষঃস্থল । সপ্তম ও অষ্টম এই দুইটি ইহাঁর দুইটি বাহু, দশম স্কন্ধ ইহাঁর প্রফুল্ল মুখপদ্ম স্বরূপ, একাদশ ইহাঁর ললাটদেশ এবং দ্বাদশ স্কন্ধ ইহাঁর মস্তক ।




ইদং ভাগবতং নাম / পুরাণ ব্রহ্মসম্মিতম্ ।
উত্তমশ্লোকচরিতং / চকার ভগবান্-ঋষিঃ ।
নিঃশ্রেয়সায় লোকস্য / ধন্যং স্বস্ত্যয়নং মহৎ ।। ।।
                                                             (ভাঃ ১/৩/৪০)

অনুবাদঃ এই শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের বাঙ্ময় বিগ্রহ এবং তা সংকলন করেছেন ভগবানের অবতার শ্রীল ব্যাসদেব । তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত মানুষের পরম মঙ্গল সাধন করা এবং এটি সর্বতোভাবে সার্থক, পূর্ণ আনন্দময় এবং সর্বতোভাবে পরিপূর্ণ ।


কৃষ্ণতুল্য ভাগবত বিভু সর্বাশ্রয় ।
                              প্রতি-শ্লোকে প্রতি-অক্ষরে নানা অর্থ কয় ।।৮।।
                                                           (চৈঃচঃ মধ্য-২৪/৩১২)

                             ভাগবত, তুলসী, গঙ্গায়, ভক্তজনে ।
                             চতুর্দ্ধা বিগ্রহ কৃষ্ণ এই চারি সনে ।।৯।।
                                                                (চৈঃভাঃ মধ্য- ২১/৮১)


6 comments: